মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
সত্তর বছয় বয়সী সাম্পান মাঝি আবদুল মজিদ। নিজ সাম্পানে বসে সকাল থেকেই অনশন করছেন কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট এলাকায়।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আঁরা বাপ দাদার আমলত্তুন সাম্পান চালাই আইর। একশ বছর ধরি সাম্পান মাঝি অক্কল সমিতি গরি নিজেরাই ঘাট চালাই আইয়ের। গত বৈশাখর ১ তারিখত্তুন মাঝি অক্কল ঘাট ছাড়া অই গেইয়ে, আঁরার ঘাট ফেরত চাই’ (আমরা আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে সাম্পান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। শত বছর ধরে সাম্পান মাঝিরা সমিতি করে নিজেরাই ঘাট পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু গত বৈশাখ থেকে মাঝিরা ঘাটছাড়া হয়ে পড়েছে। আমাদের ঘাট আমরা ফিরে পেতে চাই)।
পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিকে বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সাম্পানে অনশন শুরু করেছেন মজিদের মতো তিন শতাধিক মাঝি।
ভোর ছয়টা থেকে তাদের এ অনশন শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ অনশন পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন মাঝিরা।
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী দেশ রূপান্তরকে জানান, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট এলাকায় সাম্পান নিয়ে ভোর ছয়টা থেকে তিন শতাধিক মাঝি দিনব্যাপী অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। এর ফলে কর্ণফুলীতে যাত্রী পারাপার পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গত ১ বৈশাখ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের তা ইজারা দেয়।
সাম্পান মাঝিদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে পেশাদার জন্মগত পাটনিজীবী সমিতিতে কর্ণফুলী নদীর ঘাট ইজারা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে গত ছয় মাসেও সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন করেনি সিটি করপোরেশন।
ঘাট হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীমাতৃক এই চট্টগ্রামের হাজারো সাম্পান মাঝি। তাই পাটনিজীবী সমিতিকে ঘাট ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সাম্পান মাঝিদের আটটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী এ অনশন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে সাতটায় কর্ণফুলীর সদরঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে সারি সারি সাম্পান বেঁধে রেখে সেখানেই অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন বয়সী মাঝিরা। এদের মধ্যে ২৫ বছরের যুবক যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন ষাটোর্ধ্ব মাঝিরাও। মাঝিদের অনশনের কারণে ঘাট দিয়ে কোনো যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে না। অনেক যাত্রী ঘাটে এসে নদী পার হতে না পেরে বিকল্প উপায়ে সড়ক পথে দীর্ঘ দূরত্ব ভেঙে শাহ আমানত সেতু দিয়ে স্ব স্ব গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সদরঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি সাম্পান মাঝি মোহাম্মদ আলী বলেন, সিটি করপোরেশন সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের ঘাট ইজারা দেওয়ায় আমরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। নিরুপায় হয়ে আমরা অনশনে নেমেছি।
সাম্পান মাঝিদের অনশন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাম্পান মাঝিদের কাছ থেকে এভাবে চসিকের ঘাট কেড়ে নেয়া চট্টগ্রামের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। যা কখনো কাম্য নয়।
তিনি বলেন, করোনার কারণে সাম্পান মাঝিরা এমনিতেই চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। তার উপর নিজেদের ঘাট হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো সাম্পান মাঝি। অনেকে বাপ দাদা তিন পুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কর্ণফুলী থেকে সাম্পান চিরতরে হারিয়ে যাবে। সূত্র:দেশরূপান্তর।
ভয়েস/জেইউ।